Friday, December 2, 2016

বরিশাল - দ্য নিউ ব্যাংকক



সারাদেশে উন্নয়নের পথযাত্রায় বরিশাল হতে চলেছে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর! চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হতে পারে বরিশাল। এমন আশাবাদ উন্নয়ন-সংশ্লিষ্টদের। সিঙ্গাপুরের মতো এমনিতেই আলাদা নির্ভরতা রয়েছে বরিশালের।একটা সময় ছিল যখন বরিশালকে বাঁকাচোখে দেখা হতো। অবজ্ঞা করা হতো ‘বরিশাইলল্যা’ বলে। কারণ তখন বরিশালের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা ছিল অবহেলিত। সবদিক থেকে পিছিয়ে ছিল গোটা অঞ্চল। কিন্তু বেশ দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। সহসাই যেন উদ্ভাসিত হতে চলেছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। কারণ বরিশালের সমুদ্রবন্দর আর পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এমনসব কর্মযজ্ঞ চলছে— যা কখনো কেউ দেখেনি।

১০হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে রেললাইন আসছে বরিশালে 
ওয়াকিবহালদের মতে, নদী-খালের দেশ বরিশালে এক সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত। সড়ক পথে ফেরি পারাপার ছিল এক বিড়ম্বনার নাম। নৌপথে যাতায়াতেরও আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। আকাশপথেও বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল। রেল ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কল্পনা। ছিল না শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট, জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
বরিশালের জিসানের প্রাইভেট কার ১ লিটারে চলবে ১৪৫ কিলোমিটার!

ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগে কুয়াকাটায় পর্যটকদের তেমন কোনো সুবিধাই ছিল না। কুয়াকাটা সৈতক ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও পথে পথে ফেরি বিড়ম্বনা তাদের বিমুখ করত। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় যেতে মাওয়া-কাওড়াকান্দি পয়েন্টে পদ্মা নদী, কলাপাড়ার আন্দারমানিক নদী, লেবুখালীর পায়রা নদী, হাজীপুরের সোনাতলা নদী এবং মহিপুরের শিববাড়িয়া নদী পয়েন্টে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো পর্যটকদের।

বরিশাল-পায়রা রেলপথ ব্রিটিশ কোম্পানিকে দিয়ে নির্মাণের নির্দেশ
এই বাস্তবতায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে প্রণয়ন করে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগের গত আমলে কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত মেয়াদের শেষ দিকে কলাপাড়া সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বরিশালকে নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী 

চলতি বছর কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টের সেতু সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শুরু হয়েছে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। এইসঙ্গে দেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করছে বিলাসবহুল অত্যাধুনিক নৌযান। দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সরকারের বর্তমান মেয়াদে বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে রাষ্টীয় পতাকাবাহী বিমান ছাড়াও চলাচল করছে বেসরকারি ইউএস বাংলা এবং নভো এয়ারের বিমান। শুধু তাই নয়, দ্রুত কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারের এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল শুধু এগিয়েই যাবে না, চলে যাবে সামনের কাতারে। পর্যটনে কুয়াকাটা তথা বরিশাল হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।শুধু পর্যটনই নয়, বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা; পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।