Monday, September 26, 2016

ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের প্রস্তুতি



ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের দু’পাশে সমরসজ্জা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একাধিকবার ওয়ার রুমে যাওয়া এবং সর্বশেষ পাকিস্তানের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দেয়ায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবেশী দু’দেশই ভেতরে ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে। তারা পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসার দেড় বছরের মধ্যে ১৯৯৯ সালে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত কারগিলে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানে তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজ শরিফ। এরপর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আবারও এনডিএ ভারতের শাসনকার্য হাতে নেয়। আর এর দেড় বছরের মধ্যেই দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি-পাল্টা হুমকির মতো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। খবর রেডিও তেহরান, আনন্দবাজার, জিনিউজসহ ভারত-পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

রোববার কাশ্মীরের উরি সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড সদর দফতরে গেরিলা হামলায় ১৮ জন সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দু’দেশের মধ্যে বাগযুদ্ধের পাশাপাশি চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের পক্ষ থেকে ওই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে দাবি করে এর যথাযথ জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের দাবিকে নাকচ করে ভারত বিনা তদন্তে মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে পাল্টা দাবি করে পাকিস্তান।

পাকিস্তান লাগাতার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লংঘন আর ক্রমাগত জঙ্গি অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গেল সপ্তাহে অভিযোগ করেন ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগ। সেই সঙ্গে তিনি এটা বলেন, ভারত যে কোনো স্বল্পমেয়াদি কিন্তু দ্রুত সমাপ্ত করে দেয়ার মতো যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তৈরি। এর জবাবে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি যে কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনার কথা ভাবলে ভারত চরম ভুল করবে। আর এ রকম কোনো পদক্ষেপ নিলে তার অপূরণীয় ক্ষতির জন্য ভারতকে তৈরি থাকতেও বলেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি ভূখণ্ড রক্ষায় লড়বে তারা।

মধ্যরাতে পাকিস্তানের আকাশে এফ-১৬, নিয়ন্ত্রণ রেখায় প্রস্তুত ভারতীয় সেনাও : পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের আকাশে চক্কর দিচ্ছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর টুইট করেন, রাত ১০টা ২০ মিনিট থেকে ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করেছে। পাকিস্তানের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে থাকায় সেখানকার মানুষজন আতংকে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। গভীর রাতে হামিদ মীর অবশ্য আরও একটি টুইট করেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। দেশকে রক্ষা করতে পাকবাহিনী সব সময় প্রস্তুত, সে কথাই বুঝিয়ে দিচ্ছে বিমান বাহিনী। পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তারাও বলেছেন, আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এটা মহড়ামাত্র।”

গণমাধ্যমের একাংশের পক্ষ থেকেও একে নিয়মিত মহড়া বলে মন্তব্য করা হয়েছে। শুক্রবার পাকিস্তানের সাংবাদিক মেহর তারার ওই ঘটনাকে বিমান বাহিনীর বড় অনুশীলন বলে মন্তব্য করেন। ৫ বছর পরপর এ ধরনের অনুশীলন হয় এবং আকাশে ওড়া সব বিমান এফ-১৬ নয় বলে তিনি টুইটে জানান। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় বাহিনী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করতে শুরু করেছে বলে বৃহস্পতিবারই দাবি করে পাক সংবাদমাধ্যম। সেই রাতেই ইসলামাবাদের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলায় অবশ্য প্রস্তুত ভারতীয় বাহিনীও। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বেশকিছু অগ্রবর্তী চৌকিতে আর্টিলারি সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবারই খবর পাওয়া যায়। মজুদ করা হয়েছে জ্বালানি তেলও। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। তার মধ্যে একাধিক বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী তাদের প্রস্তুতিসংক্রান্ত বেশক’টি প্রেজেন্টেশন প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছে বলেও জানা যায়।

পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ অবশ্য নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের প্রস্তুতিকে খুব বড় করে দেখাচ্ছে। বিবিসি উর্দু এবং জিও নিউজ বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বিপুল সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সেখানে বফর্স কামান, রকেট এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে বলেও পাক মিডিয়ার দাবি। তাদের আরও দাবি, মোদি নিজেই এ সামরিক প্রস্তুতি দেখভাল করছেন। তবে এ খবর তারা কোন সূত্র থেকে পেয়েছে, পাক মিডিয়া তা জানাতে পারেনি।

নিয়ন্ত্রণ রেখায় শক্তিবৃদ্ধি করা হলেও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বাহিনী ঢুকিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেই বলেই নয়াদিল্লি জানাচ্ছে। উরিতে জঙ্গি হামলার পর এমনিতেই নজরদারি বেড়েছে নিয়ন্ত্রণ রেখায়। তারপরও কয়েক দিনে বারবার জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে। তাই ভারতকে সেখানে প্রস্তুতি বাড়াতে হচ্ছে। তবে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে সন্ত্রাসী শিবির লক্ষ্য করে ভারি গোলাবর্ষণ শুরু হতে পারে। সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালানো হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর এ তৎপরতাকে পাকিস্তান আক্রমণের তোড়জোড় ভাবলে ভুল হবে, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। পাক প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহল মধ্যরাতে ওয়ার রুম বৈঠক করেছে বলেও একটি অংশ দাবি করে। দু’তরফেই বিপুল প্রস্তুতির মাঝে পাকিস্তানের আকাশে এফ-১৬ উড়তে শুরু করা এবং পাক সরকারের ওয়ার রুম বৈঠকের খবর যদি সত্যি হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়ার রুমে নরেন্দ্র মোদি, রণকৌশল নিয়ে আলোচনা এবং কিছু প্রতিক্রিয়া : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতিমধ্যে কমপক্ষে দু’দফায় সামরিক অভিযান সংক্রান্ত ‘ওয়ার রুমে’ দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, সেনাবাহিনীর প্রধান দলবীর সিং, বিমানবাহিনীর প্রধান অরূপ রাহা, নৌবাহিনীর প্রধান সুনীল লাম্বা এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইবি এবং ‘র’-এর কর্মকর্তারা।

গণমাধ্যম জানায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে স্যাটেলাইট ছবির মাধ্যমে আযাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন অবস্থান সম্পর্কে অবগত করানো হয়। দিল্লির সাউথ ব্লকের এ বিশেষ ঘরটি যুদ্ধ বা ওই ধরনের পরিস্থিতিতেই ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোর অবস্থান, এগুলোয় আঘাত করতে ভারত কী ব্যবস্থা নিতে পারে, সেসব নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। এর আগে মোদি বলেন, প্রেমপত্র নয়, পাকিস্তানকে জবাব দিতে হবে তাদের ভাষাতেই।

অনেকেই মনে করছেন, ওয়ার রুমে মোদির পৌঁছনো দলের সামনে একটা বার্তা। কেননা ক্ষমতায় এসে মোদির সামনে চ্যালেঞ্জ তার পুরনো কথাগুলোই। বিরোধী দলের নেতা থেকে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি যে বদলাননি, একইভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবতে পারেন, সেটা বোঝানোই উদ্দেশ্য। কেননা, সেই গোপন আলোচনার পরও বেশ কিছুটা সময় কেটে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিছক কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির কোনো পদক্ষেপের দেখা মেলেনি। আর এ পরিস্থিতিতেই কেরলের কোঝিকোড়ে প্রধানমন্ত্রীকে হাজির হতে হচ্ছে সারা দেশ থেকে আসা দলের প্রায় তিন হাজার নেতার সামনে। বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠকের সেই প্রকাশ্য মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের জন্য দাবি তীব্র হবে। তবে ওই মঞ্চ থেকে মোদি কী বার্তা দেন, তার অপেক্ষায় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অনেকেই মনে করছেন, মোদিকে এখানে ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখেই মুখ খুলতে হবে। পাকিস্তানকে নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের নেতাকর্মীদের সামনে বলতে গিয়ে মাথায় রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সমীকরণও।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংকটের কথা বুঝেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দিল্লিতে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, একসময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিরন্তর ক্ষোভ দেখাতেন মোদি। ভোট প্রচারে হাততালিও জুটত। লোকসভায় তার প্রতিফলন ভোট বাক্সেও পড়েছে। সামনে এবার উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচন। দলের এবং সংঘ পরিবারের অনেকেই চান, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করে জাতীয়তাবাদের হাওয়া আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে যান মোদি। কিন্তু বিরোধী দলে থেকে বলা আর ক্ষমতায় থেকে দায়িত্ব পালনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই এ জাঁতাকলে পড়ে এখন ভারসাম্যের পথ খুঁজতে হচ্ছে মোদিকে। তিনিই গোটা দলের মুখ, আবার দেশের প্রধানমন্ত্রীও বটে। তাই দলের স্বার্থ মাথায় রেখেও হুট করে কিছু বলা বা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

এ পরিস্থিতিতে অমিত শাহ দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় পরিষদের বৈঠকে পাকিস্তান ও সন্ত্রাস ছড়াতে তাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সুযোগ দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী যা বলার বলবেন। কিন্তু দলের নেতারা যদি আমজনতার ভাবনা ও অসন্তোষকে মাথায় রেখে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতে চান, তার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু কোনোভাবেই সেটি যেন প্রধানমন্ত্রীর ওপরে অনাস্থা প্রকাশের পর্যায়ে না যায়। বৈঠকে যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে, সেখানেও কঠোর ভাষায় পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হবে। অনেকেই মনে করছেন, উরির ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর ওয়ার রুমে পৌঁছে যাওয়া দেশ ও দলের সামনে অন্য বার্তা দিচ্ছে। মোদি বোঝাতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করার দিকটিও ভেবে দেখছেন তিনি। কোনোভাবেই পিছিয়ে আসছেন না।

উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাবের ভোটের দিকে তাকিয়ে আমজনতার স্বার্থে সরকারের পদক্ষেপ ও তার প্রচারের কৌশল নিয়েই আলোচনার কথা ছিল বিজেপির বৈঠকে। কিন্তু এখন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে উরি প্রসঙ্গ। প্রধানমন্ত্রী এ পরিস্থিতিতেও কোঝিকোড়ে আসছেন বলে তার কাজের সুবিধার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সাউথ ব্লককেই যেন তুলে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে যাতে এখান থেকেই সব কাজ পরিচালনা করতে পারেন মোদি, সেই বন্দোবস্ত হয়েছে। আর কোঝিকোড়ে বিজেপির বৈঠকের আলোচনাও এগোতে চলেছে পাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। অমিত শাহ দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির জমানায় সন্ত্রাসবাদের চিহ্ন থাকবে না। তবে তারপরেও মোদির ওপর চাপ বাড়াতে সংঘের নেতা ইন্দ্রেশ কুমার থেকে শুরু করে বিজেপির সাবেক নেতা যশবন্ত সিনহা এখন প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদি সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। কয়েক দিন চুপ থেকে সংঘের নেতারা এখন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরকে কব্জা করার দাবিও তুলতে শুরু করেছেন। দল ও সংঘের এ ভাবনাকে মাথায় রেখেই সংঘ-ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা রাম মাধব উরির ঘটনার দিনেই ‘দাঁতের বদলে চোয়াল’ খুলে নেয়ার দাবি তুলে বসেন। বিজেপি নেতা চন্দন মিত্রও বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে। চাপ বাড়লেও দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ করতে গেলে যে ঝক্কি, সেটি বিলক্ষণ জানেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। যে কোনো সময়ে তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আকার নিতে পারে। সে পথে এগোতে চাইলে আন্তর্জাতিক মহল চাপে ফেলবে ভারতকে। তাই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক পথে পাকিস্তানকে একঘরে করতে চাইছেন। সেই বাস্তবতা দলের কর্মীদের বোঝাতে পারেন কিনা, সেটাই এখন মোদির পরীক্ষা।

আক্রান্ত হলে হামলার লক্ষ্য চূড়ান্ত করেছে পাকিস্তান : ভারত যদি সার্জিক্যালে আক্রমণ করে তাহলে দেশটির কোন কোন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে পাল্টা জবাব দেবে তা নির্ধারণ করেছে পাকিস্তান। এরমধ্যেই শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ভারতে হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের খবর দেয় পাকিস্তানি দৈনিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল নিউজ।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সূত্রের বরাতে তারা জানায়, পাকিস্তানে সার্জিক্যাল আক্রমণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের কোথায় হামলা করা হবে, তার একটি অপারেশনাল পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা সূত্র বলছে, ভারতের যেকোনো সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত। ভারতের কোথায় প্রত্যাঘাত করা হবে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং অপারেশনাল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাহিনীগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একটি প্রতিরক্ষা সূত্রের ভাষ্য, ভারতের কোনো ধরনের আগ্রাসন পাকিস্তান মেনে নেবে না। দেশটির সামরিক সামর্থ এবং সীমান্তে যেকোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে দেশটি। এদিকে পাকিস্তান আশংকা করছে, কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারত সরাসরি আক্রমণ না করে স্নায়ুযুদ্ধের ডকট্রিন অনুযায়ী প্রক্সি হামলা চালাতে পারে। এক্ষেত্রে আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে মর্মে প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছে একটি প্রতিরক্ষা সূত্র।

পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান সংবাদ মাধ্যম ডন জানিয়েছে, ভারতের হামলার আশংকার মধ্যেই পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে সামরিক মহড়া দিচ্ছে দেশটির বিমান বাহিনী। এজন্য উত্তরাঞ্চলে বেসামরিক বিমান চলাচল স্থগিত রেখে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে বিমান ওঠানামা করার জন্য এম-১ এবং এম-২ মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া দিতে রাশিয়ার সৈন্যরা সেখানে পৌঁছেছে। শুক্রবার পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম ডন এ তথ্য জানায়। ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার সেনাদের আগমনকে অন্যভাবে দেখছেন কেউ কেউ।