Saturday, November 5, 2016
দালালদের দখলে চরফ্যাশন পল্লী বিদ্যুৎ অফিস
আদিত্য জাহিদ: ভোলার চরফ্যাশন পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসে দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না। নতুন সংযোগ মিটার ও খুঁটির জন্য অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনকারীকে পল্লী বিদ্যুতের নির্দিষ্ট দালালের দ্বারস্থ হতে হয় সংযোগ পাওয়ার জন্য। ৫৮ নং চর আইচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের মিটারের জন্য ৭ জানুয়ারী জনৈক ঠিকাদার আহাদ চৌধুরী তুহিন আবেদন করেন। আবেদনের ১০ মাস পরে ও আজ পযর্ন্ত কেউ পরিদর্শনে আসেননি বলে নির্মাণাধীন ভবনের ম্যানেজার বাবুল অভিযোগ করেন। অতিরিক্ত লোড অথবা ত্রুটির কারণে ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করার অজুহাতে ওই ট্রান্সফর্মারের আওতায় গ্রাহকদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। ট্রান্সফর্মারের লোড বৃদ্ধি, পরিবর্তন ও মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় পল্লী বিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে সংযোগ প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা অফিস খরচের নামে দালালদের দিতে হয়। পল্লী বিদ্যুতের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৬ সালের নতুন সংযোগের আবেদনের স্তপ অফিসে পড়ে রয়েছে। দালালের দ্বারস্থ হলে পুরনো স্তপ থেকে আবেদনের ফাইল বের করে চুক্তি করতে হয় সংযোগের জন্য কাঙ্ক্ষিত আবেদনকারীকে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) নীতিমালা অনুযায়ী সংযোগ বা মিটারের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করে ১০০ টাকা অফিসে ক্যাশে ফি জমা দিতে হয়। অফিসে জিডি বাবদ ৬০০ টাকা ও সদস্য ফি ৫০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু এখানে একজন গ্রাহককে মিটার পেতে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দালালদের দিতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদেও যোগসাজশে ‘সাইড কানেকশন’ বাণিজ্য, নতুন সংযোগ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ, নতুন খুঁটি, ট্রান্সফর্মার প্রতিস্থাপন ও পরিবর্তন বাণিজ্য তুঙ্গে রয়েছে।
অপর দিকে গ্রাহকরা নানাভাবে হয়রানি, জরিমানা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। সাইড কানেকশনের নামে অবৈধ সংযোগের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গ্রাহকরা সরাসরি অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের কাছে গিয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়ে দায়সারা গোছের জবাব ছাড়া কোনো প্রতিকার পান না বলে অভিযোগ করেছেন। ফেরার পথে ভুক্তভোগী গ্রাহককে অফিস আঙিনায় দালালরা ডেকে নিয়ে কাজ কওে দেবে বলে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের যোগসাজাশে দালাল চক্র সংশ্লিষ্ট সব কাজ করে থাকে। টাকা দিলে যেকোনো কাজের ফাইল দ্রুত নড়েচড়ে ওঠে। আবার টাকা না দিলে ওই ফাইল অফিসের মধ্যে গায়েব হয়ে যায়।
ঈল্লী বিদ্যুতের চরফ্যাশন সাব জোনাল অফিসে গিয়ে গ্রাহক জাহিদুল ইসলাম জাহেরের অভিযোগ করে বলেন, দালাল রুবেল, সাদ্দাম হোসেন, জসিম উদ্দিন ও সবুজ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে জিম্মি কওে রেখেছে। দালাল জসিমসহ অন্যরা নিজেদের পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী বলে গ্রাহকদের কাছে পরিচয় দেন। নাম উল্লেখিত এরা সবাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (আরইবি) লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান ছিল বলে জানা গেছে। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এজিএম সবুর কে ওএসডি সহ চলতি বছরের মার্চ মাসে তাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতের চরফ্যাশন জোনাল অফিসের এজিএম মো. রোকন উদ্দিন মোবাইল ফোনে দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এখানে আগে অনিয়ম হয়েছে। আমি আসার পর থেকে অনিয়ম বন্ধের চেষ্টা করছি।